সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ফেসবুকিং বা ব্লগিং করার চেয়ে শিবির করা অনেক অনেক নিরাপদ।

■ আপনি যদি সরাসরি কোন সহিংসতায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে পেনাল কোডের ১৪৭ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ২ বছরের জেল।
■ সহিংসতায় যদি কোন মরণাস্ত্র নিয়ে বের হন যা দ্বারা কাউকে হত্যা করা সম্ভব, তাহলে পেনাল কোডের ১৪৮ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৩ বছরের জেল।
■ আর আপনি যদি ‘ওয়েব সাইটে’ এমন কিছু প্রকাশ করেন যা থেকে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার ‘সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়’, তাহলে আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বনিম্নে ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
বুঝতে পারলাম ফেসবুকিং বা ব্লগিং করার চেয়ে শিবির করা অনেক অনেক নিরাপদ।

ধোয়ার স্পর্শ

ধোয়ার স্পর্শ 


চাপা স্বভাবের মানুষ স্বচ্ছ । কাউকে মুখফুটে কিছুই বলতে চায় না। যা ঘটে তা সবসময় তাঁর মনের ভেতরে থাকে। একারণে এখন পর্যন্ত "প্রেম" নামে কোন জিনিস জীবনে আসেনি তাঁর। তাই পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নিল, এবার দেখেশুনে তাকে ফরজ কাজ করিয়ে দিতে হবে। অতি ধুমধামের সাথে মেয়ে দেখা হল। মেয়ের নাম তাসফি। গ্রামের মেয়ে। ঢাকায় এসেছে পড়াশুনা করতে। স্বচ্ছর সামনে যখন আনা হল, জুবুথুবু হয়ে বসেছিল। দেখে লাজুক স্বচ্ছ নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। মেয়ে তো কোন কথাই বলে না। দুজনকে এক কামরায় রাখা হল, কেউ কথা বলে না। মেয়েটা স্বচ্ছর দিকে তাকালো পর্যন্ত না। কিছুক্ষণ পর স্বচ্ছ তাঁর ঘটক ফুপাকে বলতে শুনলেন, ... " জামান সাহেব, মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আজ রাতেই কাবিন করে ফেলি, আসেন।" দু'ঘন্টা পর স্বচ্ছ আবিষ্কার করল, সে বিবাহিত। তাঁর ঘরে ফুলের বিছানায় একটা লাল বেনারসি শাড়ি পরা পুতুল বসে আছে। স্বচ্ছ সেই পুতুলের পাশে গিয়ে বসে। ইতস্তত করতে থাকে। হঠাৎ স্বচ্ছ শোনে মৃদু হাসির শব্দ। হাসিতে যেন কিছু কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। বিস্ময়ে স্বচ্ছ তাকায় সেই পুতুলের দিকে। ঘোমটা সরিয়ে তাসফি তাকে দেখছে। আহা ! কি সুন্দর চোখ। টলটলে নদীর মতন। কৃষ্ণগঙ্গার জল যেন স্বচ্ছর বুকে ঢেউ হয়ে ধাক্কা দেয়।
 - আপনি স্বচ্ছ ?
 - জ্বী।
- আমার স্বামী?
 - জ্বী।
 - সিগারেট খান?
 - জ্বী খাই।
 - ম্যাচটা দেন।
 হতবিহ্বল স্বচ্ছ প্যান্টের পকেট থেকে লাইটার বের করে এগিয়ে দেয়। তাসফি শাড়ির খুট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরায়। একটা টান দেয়ামাত্র কাশতে থাকে, "খুক খুক খুক" হাসতে হাসতে সিগারেট এগিয়ে দেয় স্বচ্ছকে । সেই কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গা হাসি। সিগারেটে টান দেয় স্বচ্ছ । শেষ করার সাথে সাথে আবিষ্কার করে তাঁর ঠোঁটে আরেকটা ঠোটের স্পর্শ। এরপর দুটি শরীরের মিলনে কিভাবে যে রাত কেটে গেল, সে জানে না। সকালে উঠে যে দৃশ্য আবিষ্কার করে স্বচ্ছ , তা অনভিপ্রেত নিঃসন্দেহে। তাঁর চোখের সামনে ফ্যানের খুটি থেকে ঝুলছে তাসফি। লাল বেনারসি শাড়িটা তাঁর গলায়। স্বচ্ছর পাশে একটা চিঠিঃ
 "আমি একজনকে ভালোবাসতাম। আপনি খুব ভালো মানুষ। আপনাকে দুঃখ দিয়ে যাচ্ছি, আমি মরেও শান্তি পাব না। এক রাত কাটিয়ে বুঝলাম, দেহের মিলনে রাত কাটানো যায়, মনের মিলন না হলে ঘর করা যায় না। আমাকে মা করে দিয়েন।"
তাসফিকে তাঁর নিজ বাড়ির পাশে কবর দেয় স্বচ্ছ । কবর দেয়া পর্যন্ত একটি কথাও বলে না স্বচ্ছ । শুধু কবর দেয়ার পর তাঁর উপর একটা গোলাপ গাছের চারা লাগিয়ে যায়। প্রতিদিন তাতে পানি দেয়, আর বিড়বিড় করে কি যেন বলে। প্রতিবছর তাসফি মারা যাবার দিন, তাসফির ভালোবাসার মানুষ মাহফুজ আসে। তাঁর সাথে অনেকক্ষণ বসে গল্প করে মুখচোরা স্বচ্ছ । শেষবার মাহফুজ জিজ্ঞেস করেছিল,
-" ভাই, মৃত মানুষকে মনে করে আর কত কষ্ট পাবেন?"
স্বচ্ছ জবাব দিয়েছিল,
-" ভাই, তাঁর জীবনে আমি হয়তো প্রেম ছিলাম না, কিন্ত আমার জীবনের প্রথম আর শেষ, একমাত্র প্রেম ছিল সে, সে আমার তাসফি।"